Monday, 30 December 2013

আমার প্রতিটি পল

আমার প্রতিটি পল শুধু তোমার ই জন্য, 
আমার প্রতিটি পল কাটে শুধু তারাদের মাঝে শুকতারা খুঁজে, 
আমার প্রতিটি পল কাটে সেই মুক্তঝরা হাসিটির খোঁজে, 
আমার প্রতিটি পল শুধু খুঁজে ফেরে তোমার  শব্দের ছন্দ, 
আমার প্রতিটি পল পার হয় চোখের তারায় আমার প্রতিবিম্বের খোঁজে, 
আমার প্রতিটি পল শুধু ছেঁয়ে থাকে তোমার অতীতের স্মৃতি নিয়ে, 
আমার প্রতিটি পল তৃষ্ণার্ত চাতকের অপেক্ষায় শুধু চেয়ে থাকে আকাশ পানে , 
আমার প্রতিটি পল ভেসে যেতে চায় তোমার সুরের লহরীতে, 
আমার প্রতিটি পল মুখিয়ে শুধু তোমার ভাললাগার রেশে জড়ানো, 
আমার প্রতিটি পল আজ আবর্তিত তোমার অস্তিত্বকে ঘিরে, 
আমার প্রতিটি পল ছুয়ে যেতে চায় তোমায় স্বপ্নের মাঝে, 
আমার প্রতিটি পল দাবী করে শুধু তোমার আকর্ষন, 
আমার প্রতিটি পল অভিমানে ভরে তোমার প্রত্যাখানে, 
আমার প্রতিটি পল আজ নিবেদিত শুধু তোমারে ভালোরাখার তরে, 
আমার প্রতিটি পল তোমায় দিতে চায় নিবেদনের অনুভুতি, 
আমার প্রতিটি পল আয়নায় ফিরে চায় তোমার প্রতিচ্ছবি, 
আমার প্রতিটি পল অপেক্ষায় হয় লাল তোমার ই তরে, 
আমার প্রতিটি পল চায় শুধু তোমার বর্তমান, 
আমার প্রতিটি পল শুধু তোমার ই জন্য।

তুমি কি কখনো

তুমি কি কখনো ভেবেছ কি করে আমার সময় কাটে তোমার চিন্তায়? 
তুমি কি কখনো জেনেছ কিভাবে তুমি ভেসে ওঠ আমার স্বপ্নে? 
তুমি কি কখনো মজেছো আমার মতো কারো প্রেমে? 
তুমি কি কখনো ঘুমের মাঝে হেসেছ নিজের মনে আমার কথা ভেবে? 
তুমি কি কখনো মাঝরাতে উঠে চাঁদের হাসি দেখে মুখভার করে কারো কথা ভেবেছ? 
তুমি কি কখনো দেখেছ সমুদ্রের ঢেউয়ের ওপর জলপরীর নাচ? 
তুমি কি  কখনো অরন্যের নিস্তব্ধতায় খুজে ফিরেছ কারো কন্ঠস্বর? 
তুমি কি  কখনো ভোরের সুর্যে দেখতে চেয়েছ কারো মায়াময় হাসি? 
তুমি কি কখনো অপেক্ষা করেছ শুধু শব্দের জন্য? 
তুমি কি কখনো সাঁতার কেটেছ মেঘের কোলে কারো স্মৃতি নিয়ে? 
তুমি কি কখনো নিজের অজান্তে কাছে টেনে চুমেছ কপাল? 
তুমি কি কখনো গভীর কষ্ট পেয়েছ কারো অসুস্থতায়? 
তুমি কি কখনো উঠেছ নেচে কারো সুরের লহরীতে? 
তুমি কি কখনো স্পর্শে পেয়েছ আমার ঠোটের ছোঁয়া নিজের অনুভুতিতে? 
তুমি কি কখনো দেখেছ আমার হাসিমুখ বইয়ের পাতার ভাঁজে? 
তুমি কি কখনো পেয়েছ আমায় আয়নায় তোমার পাশে? 
তুমি কি কখন কেঁদেছ মুখ রেখে আমার বুকের মাঝে? 
তুমি কি কখনো এঁকেছ আমার ছবি তোমার হৃদয়পটে? 
তুমি কি কখনো চেয়েছ জন্ম নিতে শুধু আমারে পাওয়ার তরে? 
তুমি কি কখনো জড়ায়েছ মোরে আপনার বাহুপাশে? 
তুমি কি কখনো পুজেছ কাহারে আপনার দেবতা রূপে? 
তুমি কি কখনো বেসেছ ভালো আমায় আমার মতন করে?

মন ভাল থাক

আজকের দিনটা কেন যে কুয়াশা ছেড়া মন কেমন করা, 
সকাল থেকে শুধুই আছে কাজের মাঝে উদাস কিছু ছেড়া মেঘের আনাগোনা, 
করছি কাজ ভাবছি শুধু আমার মনের কথা, 
শব্দ ছিল নেশা ও ছিল , ছিল না সেই সুর, 
আজকে যে সে প্রাণের ছোঁয়ায় ছিল না ভরপুর। 
লাগামছাড়া প্রেমের পরশ মনের ছোঁয়ায় জাগে, 
ক্লান্ত দেহের শান্ত সে সুর বাজলো অন্য রাগে। 
কথায় যখন জানতে পেলাম ম্লান সে হাসির কারণ, 
তিরসকারের ছলে বলি বলতে কথা বারণ। 
মেনেও সে তো মন মানে না দুষ্টু হেসে বলে 
কথাই যদি বলবো না তো ,হাসবো কিসের ছলে? 
এমন কথার জবাব তো ভাই নেইকো আমার কাছে 
সব ছেড়ে তাই হেসেই ফেলি রেগেই বসি পাছে। 
প্রাণের মাঝে প্রার্থনা যে উঠলো নিজেই ভেসে 
মনটা আমার আজই যেন সুস্থ দিনের শেষে। 
স্বপ্নে  আমায় মনটা যেন ছুট্টে এসে বলে 
দেখরে আমায় চোখটি খুলে নাচছি আমি বলে। 
হয়তো আমার প্রার্থনাটি মঞ্জুর হলো ভাই 
মনকে আমার ইশ্বর যে করলো ভাল তাই।

ছবির রং লাল

লাল হয়ে আসা সন্ধ্যের আলো যখন জানলার ফাক দিয়ে গলে এলো, 
যখন দিনের শেষের ক্লান্তি আমায় ম্লান হেসে শুধু জানাল সে আছে, 
হঠাত আমার সন্ধ্যের আশাদ্বীপ জ্বেলে উঠলো ছাপিয়ে শ্রান্তি, 
অপেক্ষার লাল রং রাঙ্গিয়ে গেল আমার সন্ধ্যে আকাশ- 
টানা টানা চোখের উজ্জ্বল দৃষ্টির সেই একটি ঝক্ঝকে মুখ, 
শিল্পীর তুলির টানের ঠোঁটে ভেসে ওঠা সেই চাঁপা হাসি- 
মুহুর্তের মধ্যে জোয়ার উঠলো আমার মনসমুদ্রে, 
লালপাড় সাদাশাড়ীর মোড়কে আমার মানসী- 
ল্যাপটপের পর্দায় উড়ে আসা এক ঝিলিক দৃষ্টির বর্ষন। 
বর্ষপুর্বের কিশোরীর দৃষ্টির সেই অবুঝ আকুলতা নয়- 
স্নিগ্ধতার মোড়কে অন্তর্ভেদী দৃষ্টির এক ঝলক, 
কেমন যেন আমার জীবনে ফুরিয়ে না যাওয়ার অঙ্গীকার নিয়ে 
সেই চোখ সেই ঠোট শুধু তিনি করেছেন তৈরী আমারি জন্য- 
দিনশেষের ঘরে ফেরা পাখীদের লুটিয়ে দিয়ে আমার আনন্দের অঞ্জলী 
সদ্যজাত চাঁদকে জানাই অন্তরের শুভেচ্ছা, 
মৌসুমী বাতাস ছুয়ে যায় আমার প্রতিটি শ্বেতবিন্দু- 
আকাশের শতকোটি তারারা আমায় দেয় শুধু অঙ্গীকার, 
কপালের ওপর উড়ে আসা চুলের গোছা সরিয়ে - 
হালকা আদরে ছুয়ে যাই গালদুটো, 
অপেক্ষার লাল রং এ রঙ্গানো আমার মানসীর ছবি।

কখনো জানতে চেয় না

কখনো জানতে  চেয় না আমি কেমন আছি-
অদ্ভুত শুন্যতাকে প্রশ্রয় না দিয়ে আজ আমি সুখী,
তোমার শব্দ আমায় এনে দেয় ভালো থাকার অঙ্গীকার।
কখনো জানতে  চেয় না আমি কেমন আছি-
তোমায় ভুলতে না পেরে রেখেছি যতনে গোপনে আপনার অন্তরে,
ভেবেছি তোমারে আমি নিজের মানসপটে নিজের কল্পনায়।
কখনো জানতে চেয় না আমি কেমন আছি-
মুখফুটে বলিনি তোমায় সেদিন মনের সে কথাগুলো,
আজ সেই শব্দের গাথা মালা অপেক্ষায় শুধু পরাবারে তব গলে।
কখনো জানতে চেয় না আমি কেমন আছি-
ভাল থাকতে চেয়ে সেই আমি আজও বসে আছি দ্বার খুলে তব লাগি,
কখনো হাসিতে কখনো সুরের ছোয়ায় রেখেছ মাতাল করে।
কখনো জানতে চেয় না আমি কেমন আছি-
অপেক্ষায় পলগোনা দিন রাত শুধু তোমার অতীতের ,
ঠিক যেন ফিরে আসে শৈশবের সেই খেলে ফেরা দিনগুলোর।
কখনো জানতে চেয় না আমি কেমন আছি-
তোমার আমার মাঝের যোজন দুরের এই বাতুলতা,
আমায় ভাসিয়ে নিয়ে যায় আকাশপথে ঝড়ের বার্তায় তোমার কাছে।
কখনো জানতে চেয় না আমি কেমন আছি-
আমার ভালোথাকার চাবিকাঠি আছে অজান্তে আজ তোমার হেফাযতে,
দিও না ফিরিয়ে সেই প্রতিশ্রুতির নিয়ম মানা হলফ্নামা।
থাক শুধু থাক অনুভুতি বাস্তবের মাঝে হারায়ে যায় না যেন
থেকে যাক শুধু আমার মনের অনুরণন তোমার হিয়ার মাঝে-
ফিরে পাই যদি শুধু সেই পল সেই দিন ,
পৃথিবী আজ তুমিময় এইক্ষণে এইকালে , শুধু আমার ই মাঝে।

Monday, 23 December 2013

একটি হাসি

পারছি না কিছুতেই একটি হাসিকে ভাগ করে নিতে, 
সঙ্ক্রামক হাসিটা আমার ঘুমের মাঝেও এঁকে দেয় দুটো রেখা, 
সুর্যোদয়ের আকাশটাও আমায় দেখে সেভাবেই হাসে- 
চাদের স্মিত হাসিটাও আজকাল আমায় এক্ভাবে হাত্ছানি দেয়, 
আমার জানলার পাশের গাছে বসা সবুজ পাখীর চোখেও একই হাসি, 
গাড়ীর জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখি চলন্ত গাছের মুখেও সেই হাসি- 
সমুদ্রের ঢেউয়ের মাথায় নেচে ওঠা সাদা ফেনার সেই এক হাসি, 
নদীর  ঢেউয়ের মাথায় বসা সাদা সেই বকের পাখায় আঁকা সেই হাসি- 
সেই হাসিটা যেটা আজ যেন ইতিহাসের প্রথম পাতা থেকে আমায় করেছে আনমনা। 
বদলে কেন যায়নি সেই হাসিটা যেটা ছিল আমার শৈশবের ভালোলাগা 
আজও কেন একইভাবে হাসিটা আমায় করে পাগল- 
যা ছিল আমার যৌবনের ক্ষণিকের পরম প্রাপ্তি, 
হঠাত সেদিন ফিরে পেলাম সেই হাসির ঝলক - 
কিন্তু কিছুতেই পারছি না ঐ হাসিটাকে ভাগ করে নিতে কারো সাথে, 
আজও সন্ধ্যের অস্তমান সুর্য আমায় দেখে একই ভাবে উঠ্ল হেসে, 
উড়ন্ত গৃহমুখী পাখিটা আমায় দেখে এক্ভাবে হেসে মনে পড়িয়ে দিল, 
হাসিটা কখনো ভেসে ওঠে শ্বেত শুভ্র ছাতের দেওয়ালে , 
কখনো বা ভেসে ওঠে ল্যাপটপের পর্দায় আমার পানে চেয়ে, 
কখনো বা ভেসে আসে ঠিক যেন সাগরপাড়ের উন্মাদ হাওয়ার হাত ধরে, 
কখনো বা ভেসে ওঠে আমার বুকের ঢেউয়ের মাথায় , 
পারছি না কিছুতেই একটি হাসিকে ভাগ করে নিতে।

আমার মনের মুক্ত মণি

আমি শুধু ডুব দিয়েছি আমার মন সাগরে 
হারিয়ে যাওয়া মুক্ত মণি বেড়াই খুজে ফিরে, 
মনের পাতায় আঁকা ছবি সামনে এলে ভেসে 
চোখের জলে ভেজাই তারে খুজে ফিরি পাশে, 
সেই যে যেদিন পেলাম আবার ছবির নতুন ভাষা 
মনটা আমার উসকে দিল জীবনভরের আশা, 
মিথ্যে ছিল চেষ্টা আমার ভুলে থাকার তাকে 
চিরকালই ছিল যে সে জীবন নদীর বাঁকে, 
সমাজ সজন সবার খেয়াল ঝুলিয়ে নিয়ে কাঁধে 
ভুলতে চেয়ে আঘাত আমি নিয়েছিলাম বেঁধে, 
আজকে যখন ভাবতে বসি হিসেব যে না মেলে 
বিপ্লবী মন কোথায় ছিল,উড়ল তাকে ফেলে? 
মিষ্টি ছিল বুদ্ধি ছিল আর যে ছিল মন 
ভাবতে গেলে সব যে ভুলে উদাস অকারণ, 
কথা ছিল তর্ক ছিল ছিল হাসির টান 
ছিল আরও কথার মাঝে তীব্র অভিমান, 
শ্যামলা রংএর তন্বী পরী মনের মাঝে আঁকা 
দিনের শেষে পাইনা তারে মনটা করে ফাঁকা, 
বলতে পার এই ছবিটাই হারাই আমি আজ 
কথার আশায় বসেই থাকি ফুরিয়ে দিনের কাজ, 
কেউ কি রে ভাই বলতে পারিস ভালবাসার দাম 
মনের কথা ভরে দিয়ে পাঠাত একটি খাম, 
সুর যে ছিল গলায় তার বেঁধে বাবুই বাসা 
আমার মনের আকাশে ছিল দানা বাঁধা আশা, 
আজকে শুধু আমার স্মৃতি আমায় করে পাগল 
দিলাম ছড়ায়ে দুনিয়া মাঝে খুলে মনের আগল, 
হায় রে ভবী ভুলতে কি আর পারলে তুমি ভাই 
দিনের শেষে আজ তো আমার কোনই কথা নাই।

অচেনা আমি

অচেনা আমি কে অজানাই থেকে গেল তার, 
রাস্তার ওপার দিয়ে হেঁটে যাওয়া আমিটা চেনেনি তাকে, 
বৃষ্টির দিনে মাথায় ছাতা  দিয়ে হেঁটে চলে যাওয়া আমিটা 
দেখতে পায়না তাঁরে,অবহেলা অনাদরে পাশ কাটিয়ে চলে যায়, 
কিভাবে সময়ের স্রোতে ভেসে গেল সে, 
রইল না বুঝে ওঠার অবকাশ তাঁর। 
প্রকৃতির নিয়ম মেনে কেন যে আমিটা পারেনি  তারে টেনে নিতে কাছে 
হারিয়েও হারাতে দেয়নি তারে রেখেছে জড়িয়ে , 
দিনের শেষে অজানা আকর্ষণের অমোঘ আঘ্রাণ , 
দুর্নিবার ছুটে যাওয়া তারই তরে সব ছেড়ে- 
শব্দে হাসিতে সময়ের পল গুনে ভাললাগার আমেজে ফিরে যাওয়া আমি 
বোঝাতে পারিনি তারে সেই আমি শুধু তারই । 
ভালবাসার নিয়ম মেনে ভীড়ের মাঝে পারিনি বিশেষে যেতে ছুটে- 
সঙ্গাহীন প্রেম খালি  রূপ নিয়েছে অবহেলার প্রতিরূপে , 
বিধাতার লেখনীর বিধানে তাই ভেসে যাওয়া দুর হতে দুরে, 
সে যে অন্তরে পুজিছে তারে সাজায়ে চিরকাল- 
চিরসত্য তাই জানেন অন্তর্যামি। 
হয়তো সেই কল্পহীন বাস্তবের রাতে 
পারিত  তাহারে টেনে নিতে নিজবুকে সঙ্গোপনে - 
কিন্তু শুধু আবেশের ঘোরে শব্দস্রোতে ভেসে গিয়ে দুজনে 
পারি দেয় স্বপ্নদেশে ,ভাললাগার সুরখানি গেয়ে যায় মনে 
না বলা থকে যায় অব্যক্ত সেই ভালবাসার অঙ্গীকার আজ ও, 
শুধু জানাতে পারিনি তারে সে আমি শুধু তার ই।

Thursday, 19 December 2013

একটি রাতের প্রার্থনা

আজকের রাতে ঘুমকে দিয়েছি ছুটি, 
এদিক ওদিক, এপাশ ওপাশ কিছু যে খুঁজে ফিরছি, 
জানলা দিয়ে শরত পুর্ণিমার চাঁদ উপহাসের হাসি হাসছে- 
ডানা ঝাপটানো রাতজাগা প্যাঁচাটা আড়চোখে দেখে উড়ে গেল 
পৌষের প্রথম শীতের শিরশিরানি জানান দেয় আমি একা। 
হঠাত হয়তো বেজে উঠ্ল মোবাইলের পরিচিত রিংটোন, 
একটি হাসির রেখা শুধু খেলে যায় ক্লান্ত মুখের প্রতিটি ভাঁজে- 
হায়! পরিচিত সেই সুরের বদলে ভেসে আসে 
চটুল সঙ্গীতের কলি, বিধাতা হয়ে যায় রসিক খুড়ো, 
মনের গীটারে ঝঙ্কার তোলে-ক্লান্তি আমায় ক্ষমা করো প্রভু। 
একটি স্বপ্ন কখনো কি কেউ ধার দিতে পারে, 
বর্তমানের বাস্তবকে কখনো কেউ কি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারে 
অতীতের সেই স্বপ্নময় বেলাভুমিতে, 
যেখানে ফেলে আসা সেই প্রতিটি মুহুর্ত হয়তো 
আজও আমায় পৌছে দেয় আমার স্বপ্নময় ভবিষ্যতের দরজায়। 
সে, আমি ও আবর্তের ঘুর্ণি- 
মাঝে খেলে বেড়ায় কতো ছায়া আবছায়া, 
মন ছুটে চলে যেতে চায় ছিন্ন করে সব বাঁধন- 
বিধাতার অট্টহাস্য ভেসে আসে ধানক্ষেতের শেয়ালের ডাকে, 
হাটু গেড়ে বসে হাতজোড়ে প্রার্থনা সেই অসীমের কাছে- 
ফিরিয়ে দাও অবিশ্বাসীর মনে ভরসার ছোঁয়া, 
শুধু সে আমি আর আমাদের ছায়া, চিরসঙ্গী।

আমার হাত

আমার হাত বাড়িয়েই রেখেছিলাম, 
আঙ্গুল ধরে এগিয়ে চলার সঙ্কেতের অপেক্ষায়, 
আমার হাত অপেক্ষায় ছিল অন্তরের ডাকের সঙ্গোপনে, 
হয়তো বা অনন্ত কালের প্রতীক্ষার শুরু সেই শৈশবে, 
আমার হাত শুধু স্পর্শের প্রতীক্ষায়, 
যার নেই কোন শেষ, নেই কোন শুরু, 
আমার হাত প্রাণ পায় তোমার স্পন্দনে 
সঞ্চার যার ছিল হৃদয়ের উত্স থেকে, 
আমার হাত জড়াতে চেয়েছে তোমারে 
পৃথিবীর সব বিপদ হতে আড়াল করে, 
আমার হাত শুধু চেয়েছে দেখাতে তোমারে, 
সেই উচ্ছল জীবনের উদ্দাম পথ, 
আমার হাত উঠে যেত শুধু অন্যায়ের বিরুদ্ধে 
যেখানে কখন যদি হতো তোমার অপমান, 
আমার হাত আজ ও রয়েছে উত্সুক 
যদি পায় সেই আনন্দের এক বিন্দু , 
আমার হাত আজ যখন স্পর্শে আমার হৃদয় 
শুধুই টের পায় তোমার অস্তিত্বের কম্পন, 
আমার হাতের ছোয়া লাগে তোমার কপোলে 
দিয়ে যায় পেলব সৃষ্টির অমোঘ আশ্বাস, 
আমার হাত শুধুই বিধাতার দান 
হয়তো বা একদিন হবে তোমার নিশ্চিন্ত আশ্রয়।

তোমার তুমি

তোমার চোখ শাসন করে পৃথিবীর সুন্দর কে, 
তোমার হাসি ফোটায় ফুলের কলিকে পরিপুর্ণতায়, 
তোমার সুর জাগিয়ে দেয় ঘুমন্ত ঈশ্বরকে, 
তোমার প্রতিটি শব্দ আলোড়ন তোলে নির্জীব নিস্তব্ধতায়, 
তোমার যুক্তি আমার অনমনীয়তাকে করে দুর্বল গর্বিত। 

তোমার স্নিগ্ধ বন্যতা আমায় দেয় প্রকৃতির দুর্বারতা, 
তোমার অকারণ ঔদাসিন্য আমায় দিয়েছে জীবনে না পাওয়ার দুঃখ, 
তোমার সারল্য আজ ও আমায় দেয় ঐশ্বরীয় সুখ, 
তোমার যৌবনের উচ্ছলতার স্মৃতি আমার হৃদয়ের মণিকোঠায়, 
তোমার শ্রান্ত মুখের ভরাট সৌন্দর্য জাগায় শিহরণ। 

তোমার প্রাণভরা ভালোবাসার সততা আমায় দেয় পুর্ণতা, 
তোমার আভরনহীন উষ্ণতা দেয় হৃদয়ের স্পন্দন, 
তোমার কৈশোরের কটাক্ষ আমায় আজও করে উচাটন, 
তোমার প্রতিটি সাফল্য আমায় করে সজীব গর্বিত, 
তোমার ভালবাসার মুগ্ধতা আজ আমার সঞ্চয়। 

তোমার অসুস্থতা আমায় দেয় রাতজাগা পল, 
তোমার নৈর্বক্তিক দাবিহীনতা আমার ভরসার শক্তি, 
তোমার প্রতিটি মুহুর্ত আমার শ্বাসে প্রশ্বাসে , 
তোমার ভালোলাগার ক্ষণ আমার প্রাপ্তি, 
তোমার সেই তুমিটা আজ বিভিন্ন রূপে আমার সর্বত্র।

তোমার একলা আকাশ

হঠাত সেদিন ভাংলো ঘুম বহুযুগ বাদে , 
   অপেক্ষার রং ফিকে হয়ে পুবাকাশে এলো সুর্যের লালিমা, 
তোমার দিনের রং বদলেছে ,আমার চোখ খুলতেই দেখেছি- 
ঠিক যেন আকাশচুম্বী অট্টালিকার বহুতলের বারান্দাতে দাড়িয়ে 
হাতে হাত রেখে কৃষ্ণচুড়ার রঙ্গে মাতাল আমরা দুজনে, 
তোমার মুখের প্রতিচ্ছবি আমার দেখা হতো শিশির বিন্দুর মাঝে, 
শীতের সন্ধ্যেতে হঠাত ভেসে আসা গজলের সুরের মত স্নিগ্ধ - 
তোমার সুর কথা হয়ে ভেসে আসে দুর হতে, 
হঠাত যেন একসাথে হেসে উঠেছি কাছের আকাশে উড়ে যাওয়া 
এরোপ্লেনের শব্দের বিরাম চিহ্নে, 
আমার দিন রাত্রির  প্রতিটি মুহর্ত 
একবুক আকাঙ্খা নিয়ে শুধু থাকে অপেক্ষার পল গোনায় বুঁদ হয়ে, 
সমুদ্রের ঢেউ গুনতে গুনতে হেসে উঠেছি অকারণে- 
দুজনেই হাতে হাত রেখে শুধু রয়েছি চেয়ে দুর অসীমের পানে, 
রাতজাগা প্রতীক্ষার শেষে শুধু ভেসে ওঠা সেই দুটি চোখ- 
একমুঠো হাসির মুক্ত ছড়ানো আমার বাগানে, 
তোমার একলা আকাশ চাঁদ চিনেছে আমার হাসি দেখে, 
আমার প্রথম কৈশোর চিনেছে আবেশের ছোঁয়া তোমার কন্ঠে, 
এখনো অপেক্ষায় আমি শুধু সেই সময়ের একমুঠো নৈবেদ্যে।

Friday, 13 December 2013

সে , আমি আর আমার আমি

এক্গুচ্ছো ভাললাগাকে সরিয়ে দিয়েছিলাম বুকে পাথর বেঁধে,
সমাজ, পরিজন, সজন অক্টোপাশের মতো রেখেছিল বেঁধে-
শহীদ হলো আমার আমি, আমার ভালোলাগা,আমার জীয়ন কাঠি-
তালাবন্ধ করে দিলাম- আমার আমিকে ছুটি,
নিজের সাথে লুকোচুরী খেলতে খেলতে হঠাত একদিন-
হাতের কাছে খুজে পেলাম খেলনাটা,
কোন এক নিঃশব্দ রাতের ঝিঁঝি পোকার ডাকের সুরে সুর মিলিয়ে,
কোন এক নির্জন পাহাড়ের ইউক্যালিপ্টাস বনে
ঝিরঝিরে হাওয়ার শব্দের মাঝে ,
অশান্ত সমুদ্রের অলস বেলাভুমিতে আধশোয়া হয়ে,
তালা খুলে খোলা হাওয়ায় ছড়িয়ে দিতাম আমার আমিটাকে,
খুজে পেতাম সেই হাসির একটি টুকরো,
সেই বুককাঁপা অপেক্ষার কয়েকটি পল,
হঠাত কখন যেন সাগর পাড়ের ধুলো উড়িয়ে,
দমকা বাতাসের ঢেউ ঝাপ বন্ধ করে দিত আমার দরজা,
আমার আমি কে আবার হতে হত বন্দী।
সং সেজে অভিনয়ের পালা হল না শেষ,
কিন্তু হঠাত বন্দী আমি বিদ্রোহ করে উঠে বসে-
পেয়েছে ফিরে সে জীয়ন কাঠির ছোয়া,
কল্লোলিনী খরস্রোতা তিস্তা ভেসে গেল তার তীর নিয়ে-
কবিতার শব্দগুলো ভরে নিল বারুদ নিঃশ্বাস-
আমার না পাওয়া আমিটা এখন চায় না যে থামতে আর,
সে এখন উড়ে যায় ইথার তরঙ্গের হাত ধরে সেই সেখানে-
সমাজ,পরিজন,সজনের বাধনের হাত হতে দুরে বহুদুরে,
যেখানে জমে আছে শুধু সে , আমি আর আমার আমি।

Thursday, 12 December 2013

সে, আমার স্বপ্ন ,আমি

রাতজাগা পাখীটা নিস্তব্ধতা কে উপহাস করে ডেকে চলেছে,
শীতের কুয়াশা ভরা পুর্ণিমার ম্লান আলো পুর্ণবয়সকা রাতের ভার বয়ে চলেছে-
আমার দুচোখের পাতা ঘুমকে দিয়েছে ছুটি-
শুধু সেই পানপাতা মুখের ওপর ভেসে ওঠা
ভীষণ সুন্দর দুটি চোখ,
শিশির বিন্দুর ছোয়া কপালের ওপর-
দু গোছা চুলের এলিয়ে পরা এক টুকরো সৌন্দর্য দুধারে,
সে ,আমার স্বপ্ন ,আমি- আবর্তিত হয়ে চলেছে।
বার বার ফিরে আসে সেই হাসি সেই মুখ,
আমার মন বন্য হয়ে যায়-
আমার ভেতরে ক্লোরোফিলের সঞ্চার আমি বোধ করি,
আমি একটি শাখা প্রশাখা বিস্তার করা গাছের মতো-
জড়িয়ে ধরেছি আমার প্রিয়ার সেই মুখ আমার শাখা প্রশাখায়,
কখন সেই শব্দ গুলো সুর হয়ে ঝরে পড়ে আমার সারা শরীরে,
আমার রক্তস্রোতের সাথে মিশে যায় তাঁরশ্বাস প্রশ্বাসের প্রতিটি অণুবিন্দু,
আমার প্রতিটি রোমকুপ যেন অক্সিজেন টেনে নেয়-
আমার মন বন্য হয়ে যায়।
দেহের উত্তাপে ভেসে চলে যাই গহীন গহন মননে,
বন্য লতার মত আঘ্রাণে আপ্লুত শুধু বিচরণ করি ,
আবিসকারের নেশায়, আনাচে কানাচে খুঁজে ফিরি
স্রোতস্বিনীর উষ্ণ ধারা- আমার প্রিয়ার প্রতিটি শ্বেদবিন্দু।
স্মৃতি, বর্তমান, ভবিষ্যতের সব ভাব্না মিলেমিশে একাকার এবং
সে, আমার স্বপ্ন ,আমি- আবর্তিত হয়ে চলেছে।

সে আমি ও একটি আবর্ত

উত্তরায়নের পথে সুর্য তখন মধ্য গগনে হাসছে নিজের মনে, 
ক্লান্তির পথে আমি হয়েছি ভাবনা চিন্তা হীন কলেবর, 
মাথার ভেতর ঘোরে শুধু কপালের ওপর খান কতক উড়ে পরা চুলের 
একটি উজ্জ্বল মুখের প্রতিচ্ছবি , যার আয়ত চোখের গভীরতা 
মনে পড়ায় সাগর দীঘির জলের গভীরতা| 
ওকেও যেন ক্লান্ত দেখাচ্ছিল সেই ছবিটায়, 
ক্লান্তির ও রূপ আছে নিজস্ব,আন্তরিক অথচ প্রানবন্ত- 
সে , আমি ও একটি আবর্ত, 
শৈশব, কৈশোর, যৌবন, ক্লান্তি, পথচলা, 
না পাওয়া,হতাশা,ফিরে পাওয়া, আনন্দ, 
স্বপ্ন, বাস্তব, কথা, হাসি, রাগ,অনুরাগ| 
আমি ছিলাম, সে ও ছিল, 
একান্ত আপন, গোপনে, অন্তরালে , 
পৃথীবির মানুষের অগোচরে,হেথায়,হোথায়,আমার নিজের দুনিয়ায়| 
আমার শৈশবের সঙ্গ, যৌবনের স্মৃতি, 
না পাওয়া স্বপ্ন,অন্তরের দুর্লভ রত্ন, 
এখানে ওখানে সেখানে ছড়িয়ে থাকা ভালোলাগা, 
আনন্দের পল, প্রেরণার উত্স| 
আমি ছিলাম , সে ও ছিল, 
সকালে, সন্ধ্যায়, পুর্ণ চন্দ্রালোকের নমনীয়তায়, 
পাহারচুড়োর নিস্তব্ধতায়, সাগরের শব্দোচ্ছাসে, 
শহরের জনারণ্যে, আমার রক্তের প্রতিটি কলরোলে| 
আমি খুজে ফিরি আমার আমিকে শুধু সেই ক্লান্ত দুটি 
উজ্জ্বল চোখের ঐ দুটি ঝক্ঝকে তারার মাঝে|

স্বীকারোক্তি

তোমার জন্য তোমাকেও ভুলতে চেয়েছিলাম,
কিন্তু নিজেকেই হারিয়ে ফেলেছি গোলোকধাঁধার মাঝে,
সেই যেদিন মনে নেই আজ , না বলতে পেরে মনের কথা
শুধু রাত জাগা পাখীগুলো জানে , কতো পল কতো প্রহর
দিয়েছি তাদের সাথ, ভুলেছি সময়ের গণন|

একটা গানের কলি গুনগুনিয়ে ওঠে আমার স্মৃতির অলিন্দে,
কেন যে ভুলতে পারিনা সেই মুহুর্ত, আনমনা সেই আমি,
কঠিন ঔদাসিন্যের খোলস ছেড়ে বেরতে পারেনি সেই আমি,
নিজের অজান্তে অমোঘ মন না মানা টানে শুধু ছুটে ছুটে যাওয়া,
কিছু কথা কিছু হাসি খানিকটা ঝগড়ার নামে খুনশুটি|

খুজে ফিরি স্মৃতি নদীর পাড়ের সেই নুড়ি গুলো,
আজও কিন্তু মনের আয়নায় ঝকঝকে প্রতিচ্ছবি সব,
ভুলেও ভুলতে পারিনি কিছুই, তাই আজ ও বসে থাকি,
ভাবনায় সেই হাসি সেই কথা সেই ভাবনারআঁকিবুকি-
যদি ফিরে যেতে পারি সময়ের পথ বেয়ে সেই নজরের টানে|

আজ ও যখন রাতজাগা তারাগুলো উপহাস করে,
ভোরের স্বপ্ন শুধু টেনে নিয়ে যেতে চায়-
সেই কৈশোরের লুকোচুরি,ডাক্তার ডাক্তার খেলা ,
কিন্তু পারিনা বাঁধনের সেই গেড়ো খুলে ছুটে যেতে-
পারিনি ভুলতে যদিও তোমায় শুধু চেষ্টার ছিল না ত্রুটি|
আসলে চাইনি ভুলিতে কখনো আমি সেই তোমাকে
পারিনি ছড়ায়ে দিতে যে মোরে এই জগতের মাঝে
রেখেছি আমারে আমার মাঝে যতনে লুকায়ে
লক্ষনের গন্ডী পার করে আসেনিগো কেউ শুধু আপনাতে মোরে|